অস্ট্রেলিয়া একটি উন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী দেশ। উন্নত জীবনমান ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা থাকায় ৩য় বিশ্বের দেশগুলোর মানুষের স্বপ্ন থাকে অস্ট্রেলিয়া গমনের । এই স্বপ্ন পূরণের একটি মাধ্যম হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা। অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা দুই প্রকারের হয়ে থাকে যথা- অস্থায়ী কাজের ভিসা এবং স্থায়ী কাজের ভিসা। এই দুই ধরণের ভিসার জন্য টেমপরারি স্কিল শর্টেজ –সাবক্লাস ৪৮২ (Temporary Skill Shortage Subclass 482) নামে একটি ভিসা চালু রয়েছে। এই ভিসার ক্ষেত্রে বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও পেশাদার কর্মীদের অস্ট্রেলিয়ায় কাজের জন্য গমনের সুযোগ রয়েছে।

কিভাবে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পাওয়া যায়
অনেকের প্রশ্ন থাকে যে কিভাবে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার অস্ট্রেলিয়া সরকার অনুমোদিত একজন স্পন্সর (নিয়োগকারী) প্রয়োজন হয়। অস্ট্রেলিয়ার কাজের ভিসাগুলোর প্রধান আবশ্যিক শর্ত হচ্ছে একটি অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আবেদনকারীকে চাকরির সুযোগ দেওয়া অর্থাৎ স্পন্সর করা। বাংলাদেশ থেকে কেউ অস্ট্রেলিয়ায় আসতে হলে তাঁকে অবশ্যই এমন স্পন্সরের মাধ্যমে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে যা বাস্তবত অনেক কঠিন। আবার স্পন্সরের নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নজিরও রয়েছে। তাই খুব সাবধান। কাজের ভিসায় আসা নতুন সুবিধাগুলো সবচেয়ে ভালো নিতে পারবেন অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। যারা অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে এসেছেন, তাঁরা স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করার জন্য এই ভিসা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। সরাসরি ব্যবসাপ্রতিস্টানের সঙ্গে কথা বলে এই ভিসার ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পেশার শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিশেষ করে ট্রেড পেশার জন্য অস্ট্রেলিয়ান কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী সার্টিফিকেট-৩/৪ (III/ IV) অথবা ডিপ্লোমা প্রয়োজন হয়। স্কিল লেভেল ১ মাত্রার পেশার জন্য ব্যাচেলর বা মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। যেকোন পেশার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩-৪ বছরের পূর্ণকালীন কাজের অভিজ্ঞতা দরকার হয়।
কি কি দলিল দস্তাবেজ এর প্রয়োজন
১। অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার জন্য অভিজ্ঞতা প্রমাণের নিমিত্তে চাকুরির নিয়োগপত্র
২। বিগত ২ বছরের বেতন বিবরণী, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী প্রয়োজন হয়।
৩। সংশ্লিষ্ট পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে ৫-৬ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।তবে সংশ্লিষ্ট পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে রিকগনিশন অব প্রিয়োর লারনিংয়ের (Recognition of Prior Learning) মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় নিদিষ্ট সংখ্যক কলেজ হতে পেশা সংক্রান্ত শিক্ষাগত সনদ অর্জন করা যায়।
৪। পেশা বিবেচনায় আইইএলটিএসের স্কোর প্রয়োজন হয় ৫ থেকে ৬।
৫। আইইএলটিএস ছাড়াও অন্যান্য স্বীকৃত পরীক্ষা যেমন টোফেল, পিটিই গ্রহণযোগ্য।
অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার জন্য বাংলাদেশীদের জন্য সুখবর
বিদেশি কর্মীদের কাজের দক্ষতা অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাই করাতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশি পাসর্পোটধারীদের কয়েকটি পেশার জন্য দক্ষতা যাচাই করানোর প্রয়োজন হয় না। সেগুলো হলো-অটোমোটিভ ইলেকট্রিশিয়ান, ক্যাবিনেট মেকার, কারপেন্টার, কারপেন্টার ও জয়েনার, ডিজেল মোটর মেকানিক, ইলেকট্রিশিয়ান (জেনারেল), ইলেকট্রিশিয়ান (স্পেশাল ক্লাস), ফিটার (জেনারেল), ফিটার ও টারনার, ফিটার-ওয়েল্ডার, জয়েনার, মেটাল ফেবরিকেটার, মেটাল মেকানিস্ট (ফার্ষ্টক্লাস), মোটর মেকানিক (জেনারেল), প্যানেল বিটার, পেস্ট্রিকুক, সিটমেটাল ট্রেড ওয়ার্কার, টুলমেকার, ওয়েল্ডার (ফার্স্টক্লাস)।
বেতন কেমন
টেমপরারি স্কিল শর্টেজ ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া কর্মীদের বার্ষিক বেতন কমপক্ষে ৭০,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য ওয়েবসাইট
অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য https://immi.homeaffairs.gov.au/visas/getting-a-visa/visa-listing/temporary-skill-shortage-482 এই ওয়েব সাইটে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এটি অস্ট্রেলিয়ার সরকারী ওয়েবসাইট।
অস্ট্রেলিয়া ভিসার খরচ কেমন
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য বর্তমানে ১১ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার মতো খরচ আসতে পারে। অর্থাৎ যারা অস্ট্রেলিয়াতে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে চান তাদের খরচের পরিমাণটা এরকম হতে পারে। আবার যদি কেউ ছাত্র ভিসার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াতে যেতে চান তাহলে তার খরচ আসতে পারে ৬ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ৭ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
সতর্কতাঃ
বাংলাদেশে অনেক এজেন্সি/দালাল চক্র আছে যারা মিস্টি মিস্টি কথা বলে আপনার কস্টে অর্জিত টাকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করবে। তাই দালাল চক্র হতে সাবধান থাকুন।