যুদ্ধ বিগ্রহের যদি একটি তালিকা তৈরী করা হয় তালিকার প্রথম স্থান অধিকার করবে ইসরাইল ফিলিস্তিনের যুদ্ধের কারণ। ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ জানতে চাইলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ফিলিস্তিনে জেরুসালেম শহরের ইতিহাসের দিকে। জেরুসালেম শহরটি হচ্ছে মুসলিম, ইহদি এবং খ্রিস্টান এই তিন সম্প্রদায়ের কাছে খুবই গুরুত্তপূর্ণ। এই তিন ধর্ম যথা- ইসলাম ধর্ম , খৃস্ট ধর্ম এবং ইহদি ধর্মে র সবাই জেরুসালেম শহর নিজেদের দখলে রাখতে চায়।
ইসরাইল ফিলিস্তিন দন্দের প্রথম সূত্রপাত
ইসরাইল ফিলিস্তিন দন্দের প্রথম সূত্রপাত হয় যখন ১৯৪৮ সালে ইহদিরা ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে নিজেদের একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করে, এখান থেকেও ইসরাইল ফিলিস্তিনের মূল সমস্যা বুঝা যাবে না। মূল সমস্যা বুঝতে ফিরে যেতে হবে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের আগের সময়ে। যখন প্রায় সম্পূর্ণ আরব অঞ্চল শাসন করত মুসলিম অটোম্যান সামরাজ্যের শাসকরা, অটোম্যান সামরাজ্যে ইহদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিম তিন সম্প্রদায়ই শান্তিপূর্ণ ভাবে একসাথে বসবাস করত।
অটোম্যান সামরাজ্যের জনসংখ্যার অনুপাত
১৯৭৮ সালের জনসংখ্যার এক হিসেবে দেখা যায় যে অটোম্যান সামরাজ্যে ৮৭% মুসলিম, ১০% খ্রিস্টান এবং মাত্র ৩% ইহুদি ছিল। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে জাতিসত্তা নিয়ে একটা বিবাদ তৈরী হয়, যাকে উগ্র জাতিসত্তা চেতনা বলা যেতে পারে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ইহুদিদের ধারণা হয় যে তারা সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে, তখন তারা উপলব্ধি করে যে তাদের নিজেদের একটি স্বাধীন দেশ দরকার।
জেরুসালেম কনসেপ্ট
১৮৯৭ সালে ইহুদি সাংবাদিক থেওডর হারযট পৃথিবীর সামনে Zionism কনসেপ্ট তৈরী করেন যেটাকে ইহুদিদের একটা দেশ হবে, যেখানে শুধু ইহুদিরা বসবাস করবেন। এটাকে জেরুসালেম কনসেপ্ট বা স্বপ্ন বলে প্রচার করেন। এই সময় থেকে দলে দলে ইহুদিরা জেরুসালেম যথা ফিলিস্তিনে এসে জমি ক্রয় করে বসবাস শুরু করল।
বেলফল ঘোষণা (BALFOUR DECLARATION) কি
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অটোম্যানরা বৃটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে ১৯১৫ সালে মক্কার শাসক শরিফ হোসেন কে বৃটিশরা কথা দেয় যে তারা যদি অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বৃটিশদের হয়ে যুদ্ধ করে তাহলে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পুরাটাই ফিলিস্তিনসহ মক্কার শাসক শরিফ হোসেন কে দেয়া হবে। এদিকে আবার ১৯১৬ সালে ফ্রান্সকে বৃটিশ কথা দেয় যে তারা যদি বৃটিশদের হয়ে অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যুদ্ধে জয়লাভ করলে অটোম্যান সাম্রাজ্য ফিলিস্তিনসহ তারা অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিবে। পরের বছর ১৯১৭ সালে বৃটিশরা ইহুদিদের কথা দেয় যে তারা যদি বৃটিশদের হয়ে অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যুদ্ধে জয়লাভ করলে ফিলিস্তিনে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দিবে। যাকে BALFOUR DECLARATION বলে। বিশ্ব যুদ্ধে বৃটিশরা জয়লাভের পর তারা তাদের দেয়া কথা রাখেনি।
ফিলিস্তিনে বৃটিশ উপনিবেশ স্থাপন
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শেষে ১৯১৮ সালে বৃটিশরা তাদের দেয়া কথা না রেখে ফিলিস্তিনে বৃটিশ উপনিবেশ স্থাপন করে এবং ফিলিস্তিনবাসীদের বলে যে যতদিন ফিলিস্তিনবাসীরা নিজেরা নিজেদের শাসন করার যোগ্যতা অর্জন না করে ততোদিন বৃটিশরা ফিলিস্তিন শাসন করবে। ১ম বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিশ্ববাসি দেখেছে বৃটিশদের ভন্ডামি, তারা তাদের দেয়া কোন কথাই রাখেনি।
ফিলিস্তিন ভাগ
১৯৪৭ সালে ইউরোপ এবং আমেরিকার চাপে জাতীসংঘে ফিলিস্তিনকে দুভাগে ভাগ করে একভাগকে ইসরাইল রাস্ট্র প্রতিষ্ঠালাভ করে এবং আর এক ভাগ ফিলিস্তিন নাম করণ করে। এই ভাগকে আরবরা স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নেয়নি। ইসরাইলিরা পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ১৪ মে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল নিজেদের স্বাধীন রাস্ট্র হিসেবে ঘোষনা করে। স্বাধীনতা ঘোষনার পর ১৫ মে ১৯৪৮ সালে আরব বিশ্ব ইসরাইলে আক্রমণ করে, সেই লড়াইয়ে পুরো আরব দুনিয়াকে হারিয়ে ফিলিস্তিনের ৭৫% ভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল, এর ফলে প্রায় ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিজ দেশে উদবাস্তুতে পরিণত হলো।
১৯৬৭ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধ
১৯৬৭ সালে আরব এবং ইসরাইল ৬ দিনে যুদ্ধে আরবরা আবার হেরে যায়, এই যুদ্ধে ইসরাইল পুরো ফিলিস্তিন দখল করে নেয়। এভাবেই ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে গেল, তার পর হতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো নিজেদের মাতৃভূমি উদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
I liked it as much as you did. Even though the picture and writing are good, you’re looking forward to what comes next. If you defend this walk, it will be pretty much the same every time.