ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ বা স্তন ক্যান্সার এর প্রাথমিক  লক্ষণ হচ্ছে স্তন কালো হয়ে শক্ত হয়ে ‍যাওয়া বা ভেতরে ঢুকে যাওয়া। স্তনের নির্দিষ্ট স্থানের চামড়ায় চুলকানি হওয়া বা স্তনের নির্দিষ্ট স্থানের চামড়ার রং বদলে যাওয়া। এ ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে। যেমন স্তন ব্যথা করা, স্তনের বোঁটায় ঘা হওয়া, অত্যধিক চুলকানো ইত্যাদি

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ
ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ

স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার কি

স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার বলতে বুঝায় স্তন/ব্রেস্টে কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে এবং অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হওয়াকে স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার বলে। 

স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়

স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার এর জন্য দায়ী আমাদের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন। যেমন আজকাল আমরা প্রচুর ফাস্ট ফুড খাই, সবুজ শাকসবজি খুবই কম খাই, কম শারীরিক পরিশ্রম করি- যার ফলে আমরা অতিরিক্ত স্থলতার জন্য স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম কারণ।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ
testing breast cancer

স্তন ক্যান্সারের ধরন

স্তন ক্যান্সার সাধারণত ৩ ধরনের যথাঃ

১। সাধারণ ক্যাটাগরির ক্যান্সার যাদের কোনো রিস্ক নাই।

২। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- বিআরসিআরওয়ান জিন মিউট্রেশন আছে। যে মিউট্রেশন যদি মায়ের বা প্রথম ব্লাডের কারও পজিটিভ থাকে, তাহলে এটা জিনগত মানে ক্রমাগত বংশ পরম্পরায় এই জিন মেয়েরও বহমান হতে পারে। সুতরাং এটাকে বলে হ্যারিডিটেরি ক্যান্সার।

৩। অ্যাভারেজ গ্রুপ ক্যান্সার। যাদের ফ্যামিলি বা তার জিনের মধ্যে কোনো মিউট্রেশন নাই তাদেরকে বলা হয় অ্যাভারেজ রিস্ক গ্রুপ ক্যান্সার

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ এর পরও যে লক্ষণ দেখা যায়

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ এর পরও যে লক্ষণ দেখা যায় লক্ষণগুলো হচ্ছে স্তনের রং এবং আকৃতির পরিবর্তন- স্তনের রং যদি পরিবর্তন হতে থাকে, লালচে ভাব, চুলকানি এসব হয় তখন থেকেই সাবধান হতে হবে। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে স্তনের আকৃতির দিকেও। যখন দেখবেন হঠাৎ করেই  স্তনে পরিবর্তন আসে অথবা স্তন ফুলে যায় তখন সেটি অবহেলা না করে  যদি কোনও পরিবর্তন আসে কিংবা স্তন ফুলে যায় তাহলে প্রাথমিক ভাবে এটি স্তন ক্যান্সারে লক্ষণ ধরে নেয়া হয় তবে আতংকিত না হয়ে জরুরী ভাবে ডাক্তারের কাছে পরীক্ষার নিরীক্ষা করে সঠিক কারণ জানা উচিৎ 

স্তন ক্যান্সার হলে কখন ডাক্তার দেখাতে হবে

আপনি যদি আপনার স্তনে কোনো পিণ্ড বা অন্য কোনো পরিবর্তন দেখতে পান – এমনকি যদি একটি কোন পরিবর্তন দেখতে পান তখন দ্রুত আপনি ডাক্তার দেখান।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ
Breast cancer pic

ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ

১। ডাক্তাররা জানেন যে স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করলে স্তন ক্যান্সার হয়। এই কোষগুলি সুস্থ কোষগুলির তুলনায় আরও দ্রুত বিভক্ত হয় এবং জমা হতে থাকে, একটি পিণ্ড বা ভর তৈরি করে। কোষগুলি আপনার স্তনের মাধ্যমে আপনার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে (মেটাস্টেসাইজ)।

২। স্তন ক্যান্সার সাধারণরত দুগ্ধ উৎপাদনকারী নালীর কোষ দিয়ে আক্রমন শুরু করে। স্তন ক্যান্সার লোবিউলস (আক্রমণাত্মক লোবুলার কার্সিনোমা) নামক গ্রন্থি টিস্যুতে বা স্তনের মধ্যে অন্যান্য কোষ বা টিস্যুতেও শুরু হতে পারে।

৩। গবেষকরা হরমোন, আপনার দৈনন্দিন জীবনধারা এবং কোন পরিবেশে আপনি বসবাস করছেন তার প্রভাবেও স্তন ক্যান্সার হতে পারে। 

৪। স্তন ক্যান্সার বংশগত কারণেও হতে পারে যেমন মায়ের স্তন ক্যান্সার হলে মেয়ের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া স্তন ক্যান্সার

গবেষকরা অনুমান করেছেন যে প্রায় 5 থেকে 10 শতাংশ স্তন ক্যান্সার একটি পরিবারের প্রজন্মের মধ্য দিয়ে যাওয়া জিন মিউটেশনের সাথে যুক্ত।

৫। আপনি যদি শিশু বা অল্প বয়সে  আপনার বুকে বিকিরণ চিকিৎসা করান তাহলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৬। অতিরিক্ত ওজন। অতিরিক্ত ওজন বা অতিরিক্ত মোটা হলে আপনার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। অল্প বয়সে আপনার পিরিয়ড শুরু হওয়া। 

৭। ১২ বছর বয়সের আগে আপনার পিরিয়ড শুরু হলে এটা  স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৮। মহিলাদের কম বয়সেই মেনোপজ শুরু হলে অর্থাৎ অল্প বয়সেই পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুকি বাড়ে। 

৯। বেশি বয়সে প্রথম সন্তান হওয়া। যে মহিলারা 30 বছর বয়সের পরে তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেন তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

১০। গর্ভবতী ছিল না. যে মহিলারা কখনও গর্ভবতী হননি তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এক বা একাধিক গর্ভধারণের মহিলাদের তুলনায় বেশি হয়।

১১। মদ্যপান. অ্যালকোহল পান করলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা উপায়

প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। ফাইবার স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। আঁশজাতীয় খাবার পরিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, বর্জ্য নিঃসরণ ও কোষ্ঠ পরিষ্কারে ভূমিকা রাখে। তাজা ফলমূল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। বেরি–জাতীয় ফল যেমন, ব্লবেরি, স্ট্রবেরি ও ব্ল্যাক বেরি রাস্পবেরি বিশেষ উপকারী

১। প্রত্যেক পুরুষ/ মহিলার উচিৎ মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্তন ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা। স্তনে কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা যথা  স্তন কালো হয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া বা ভেতরে ঢুকে যাওয়া। স্তনের নির্দিষ্ট স্থানের চামড়ায় চুলকানি হওয়া বা স্তনের নির্দিষ্ট স্থানের চামড়ার রং বদলে যাওয়া। এগুলোর প্রতি লক্ষ রাখা। 

২। যদি অ্যালকোহল পান করতেই হয় পরিমিতভাবে অ্যালকোহল পান করুন। 

৩। ব্যায়াম করা সপ্তাহে কমপক্ষে ৫দিন প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করতে হবে।  

৪। পোস্টমেনোপজাল হরমোন থেরাপি সীমিত করুন। কম্বিনেশন হরমোন থেরাপি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। হরমোন থেরাপির সুবিধা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

এখানে আর পড়তে পারেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *